আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন : প্রধান উপদেষ্টা

 

ছবি: সংগৃহীত

জাপানের রাজধানী টোকিওতে জাপান-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী লিগের সভাপতি ও জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তারো আসোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এই অঙ্গীকার পুনরায় ব্যক্ত করেন।

নির্বাচনের সময়সূচি ও সংস্কার পরিকল্পনা

ড. ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিনটি প্রধান ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে: রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন। তিনি বলেন, “যদি রাজনৈতিক দলগুলো সীমিত সংস্কার চায়, তাহলে নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি বৃহত্তর সংস্কার চায়, তাহলে নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে হবে।” 

আরও পড়ুনঃ

১০ হাজার টাকার মধ্যে সেরা ৫টি স্মার্টফোন (২০২৫ আপডেট)

জাপানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও সমর্থন

জাপান বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী। ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে তারো আসো বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং বলেন, “সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য সাধারণ নির্বাচন অত্যাবশ্যক।”

জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ইকুইনা আকিকোও ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরে জাপানের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে জানান।

অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সংস্কার

ড. ইউনূস বলেন, “ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন এবং ঋণ পরিশোধে অগ্রগতি অর্জনসহ অর্থনৈতিক খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছে সরকার।” তিনি আরও জানান, “পূর্ববর্তী সরকার দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছিল। যুবসমাজেরই উদ্যোগে আমি দায়িত্ব নিয়েছি, কারণ তারা চায় দেশে স্থিতি ফিরুক, সমস্যার সমাধান হোক।”

রোহিঙ্গা সংকট ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

ড. ইউনূস তারো আসোকে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের কথা তুলে ধরেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন জানাতে জাপানের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট বিশ্বে অন্য কোনো শরণার্থী সংকটের মতো নয়। তারা অন্য কোনো দেশে যেতে চাইছে না, তারা শুধু নিজেদের ঘরে ফিরতে চায়।”

রাজনৈতিক চাপ ও বিরোধী দলের দাবি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হবে বলে সতর্ক করেছে। বিএনপির নেতা তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভিডিও বার্তায় বলেন, “গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য অবিলম্বে নির্বাচন দরকার।” 

সামরিক বাহিনীর ভূমিকা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা

সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে নির্বাচন চেয়েছেন। তবে ড. ইউনূস বলেছেন, “আমরা কোনো চাপের মুখে নির্বাচন এগিয়ে আনবো না। সংস্কার সম্পন্ন করেই নির্বাচন হবে।”

উপসংহার

ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জাপানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন এবং দেশের অভ্যন্তরীণ চাপের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন একটি চ্যালেঞ্জ। তবে ড. ইউনূস আশাবাদী যে, “এই ঐতিহাসিক সুযোগ আমরা নষ্ট করবো না। আমরা এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলবো যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সংকট থেকে দেশকে রক্ষা করবে।”