Native News

Friday, May 30, 2025

সততার দীপ্তিতে রাষ্ট্রনায়ক: শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

SHARE

 

ছবি: শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

বাংলাদেশের ইতিহাসে সততা, দৃঢ়তা ও কর্তব্যপরায়ণতার প্রতীক হয়ে আছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। যিনি শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই থেমে থাকেননি, বরং রাষ্ট্র পরিচালনায় নিষ্ঠা, সাহসিকতা ও দূরদর্শিতা দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন একটি আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ। একজন মুক্তিযোদ্ধা, রাষ্ট্রনায়ক ও সংগঠক হিসেবে তাঁর জীবন ও আদর্শ আজও জাতির পথনির্দেশক।


সামরিক থেকে রাষ্ট্রপতি: সততার অহংকার

জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং তাঁর সততা, কর্মনিষ্ঠা ও সাহসিকতার জন্য খুব দ্রুতই খ্যাতি অর্জন করেন। করাচিতে কর্মরত অবস্থায় ঘুষ, তদবির কিংবা স্বজনপ্রীতির কোনো রকম ছায়াও তার উপর পড়েনি। তাঁর ফাইলগুলোতে বারবার লেখা হয়েছে—“সৎ, কর্তব্যপরায়ণ, বুদ্ধিদীপ্ত”।

১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশ ধ্বংসের মুখে, তখন চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন জাতির অন্তরের কণ্ঠস্বর। তাঁর নেতৃত্বে অসংখ্য বাঙালি সেনা যুদ্ধে অংশ নেয়, এবং তিনি নিজে সম্মুখযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।

আরও পড়ুনঃ 

ফের দেশের আকাশে ভারতীয় ড্রোন


রাষ্ট্রপতির আসনে দায়িত্বশীলতার নতুন ইতিহাস

১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন জিয়াউর রহমান। তার শাসনামলে:

  • চালু করেন বহুদলীয় গণতন্ত্র, যা একনায়কতান্ত্রিক ধারার বিপরীত।

  • পরিবার বা আত্মীয়কে কোনো রাষ্ট্রীয় সুবিধা না দিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের বিলাসিতা কমিয়ে সাধারণ জীবনযাপন করেন।

  • দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেন এবং সেই নীতিকে নিজের জীবনে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করেন।

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর উপন্যাস "দেয়াল"–এ লিখেছেন:

“জিয়া মানুষটা সৎ ছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। লোক দেখানো সৎ না, আসলেই সৎ। তাঁর মৃত্যুর পর দেখা গেল, জিয়া পরিবারের কোনো সঞ্চয় নেই।”


অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক চিন্তাধারা

জিয়া উদ্ভাবনী চিন্তা দিয়ে সবুজ বিপ্লব ঘটান, কৃষিকে প্রধান অর্থনীতির রূপ দেন।

  • ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ উৎসাহ দেন

  • গ্রামে পৌঁছে দেন ব্যাংকিং সুবিধা

  • খাস জমি কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করেন

তিনি একটি আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতির ভিত গড়ে তোলেন। দেয়াল–এ হুমায়ূন আহমেদ লেখেন:

“জিয়াউর রহমানের পাঁচ বছরের শাসনে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি। দ্রব্যমূল্য লাগামছাড়া হয়নি। দেশের নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়তে লাগল।”


রাষ্ট্রচিন্তা ও রাজনৈতিক দর্শন

জিয়াউর রহমান প্রবর্তন করেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ—একটি পরিচয়ভিত্তিক চিন্তা, যেখানে গুরুত্ব পায় বাংলাদেশের ভূখণ্ড, সংস্কৃতি ও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের চেতনা। তিনি বিশ্বাস করতেন:

  • শোষণমুক্ত সমাজ” গড়তে হবে পরিকল্পিত পদ্ধতিতে

  • প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করে স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে

  • উন্নয়নের সাথে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে

এখানেই তিনি আলাদা—রাষ্ট্রের শীর্ষে থেকেও তিনি “জনগণের মালিকানা”–কে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।


জনগণের আস্থার প্রতীক

রাষ্ট্রপতি হয়েও তিনি গায়ে গায়ে ঘুরেছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট নিজ কানে শুনেছেন। তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্তেই ছিল জনমতের প্রতিফলন।

কিছু মহল তাঁর ক্ষমতায় আসা নিয়ে অপপ্রচার চালালেও বিবিসি খ্যাত সাংবাদিক সিরাজুর রহমান লিখেছেন:

“সিপাহি-জনতার আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। জিয়াকে তারা গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করে কাঁধে তুলে নিয়েছিল। জিয়া কখনো কোনো ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা গ্রহণ করেননি।”


ভারতীয় ষড়যন্ত্র ও ট্র্যাজিক প্রয়াণ

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সেনা অভ্যুত্থানে শহীদ হন জিয়া। বহু বিশ্লেষক মনে করেন, একটি আত্মনির্ভরশীল ও ভারতের প্রভাবমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার অপরাধেই তিনি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র-এর ষড়যন্ত্রে প্রাণ হারান

সিরাজুর রহমান তাঁর প্রবন্ধে বলেন:

“জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীকে ভালোবাসতেন, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন—এই কারণেই ভারতের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। তাঁর রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্ব ভারতের আগ্রাসী নীতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।”


চিরজাগরুক এক চেতনার নাম ‘জিয়া’

জিয়া ছিলেন এক মহান দূরদর্শী নেতা, যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন শোষণমুক্ত, আত্মনির্ভরশীল, সুশাসিত এক রাষ্ট্রের। তিনি ছিলেন রাষ্ট্র পরিচালনায় সততার জীবন্ত উদাহরণ। মৃত্যু তাকে থামাতে পারলেও, থামাতে পারেনি তার চিন্তা, আদর্শ ও প্রভাব।

আজও তিনি লাখো জনতার অন্তরে বেঁচে আছেন—একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন রাষ্ট্রনায়ক, একজন আদর্শিক নেতা হিসেবে।
তিনি আমাদের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়, আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রতীক।


লেখক: কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক


SHARE

Author: verified_user

0 $type={blogger}: