Native News

Friday, May 30, 2025

ফের দেশের আকাশে ভারতীয় ড্রোন

SHARE


প্রতীকী ছবি


স্টাফ রিপোর্টার | ঢাকা, ৩০ মে ২০২৫

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ফের নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী ও বারবান্দা সীমান্তে প্রবেশ করে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ পাঁচটি ড্রোন উড়িয়েছে, যা বাংলাদেশের আকাশসীমার এক কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে নজরদারি চালায়।

এই ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার (৩০ মে) রাত সাড়ে ৮টা থেকে রাত ৯টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। ভারতের কাকড়িপাড়া বিএসএফ ক্যাম্প থেকে এসব ড্রোন চালানো হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

আরও পড়ুনঃ 

শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’ টিজারে তোলপাড়: 

মুখোশের আড়ালেই লুকিয়েছিলেন নায়ক!

ড্রোন নজরদারির সময়সীমা ও স্থান

রৌমারী উপজেলার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফিরোজ মিয়া জানান, ভারতের বিএসএফ এই ড্রোনগুলো বড়াইবাড়ী ও বারবান্দা গ্রামের ওপরে অবৈধভাবে উড়িয়েছে। এ সময় বড়াইবাড়ী বিজিবি ক্যাম্পের ওপরও নজরদারি চালানো হয়।

তিনি বলেন,

"গত ২৭ মে বড়াইবাড়ী সীমান্ত দিয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের ১৪ জন নাগরিককে বিএসএফ বাংলাদেশে পুশ ইন করার পর থেকেই এই ধরনের নজরদারি চলছে। এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের চরম লঙ্ঘন।"

⚠️ সীমান্তে আতঙ্ক ও উত্তেজনা

স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক মিয়া বলেন,

"রাত সাড়ে ৮টায় ভারতের চার থেকে পাঁচটি ড্রোন আমাদের গ্রামসহ বিজিবি ক্যাম্পের ওপর দিয়ে উড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।"

তিনি আরও বলেন,

"ভারতের এই অবৈধ ড্রোন অভিযান বন্ধ না হলে সীমান্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।"

সামরিক সূত্রের নীরবতা

বড়াইবাড়ী বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আঞ্জু মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বিজিবির (বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) অবস্থান এখনো অস্পষ্ট।

🧭 সীমান্ত পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক ইতিহাস

উল্লেখ্য, সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের ‘পুশ ইন’ কার্যক্রম নতুন নয়। গত সপ্তাহেই ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় ও প্রশাসনিক মহলে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

এবার তারই ধারাবাহিকতায় বিমানচালিত নজরদারি (drone surveillance) বাংলাদেশের আকাশে চালিয়ে আবারও সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন করলো ভারত। এ ধরনের আচরণকে সীমান্ত পরিস্থিতির জন্য বিপজ্জনক মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

📡 আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ড্রোন অনুপ্রবেশ একটি অপরাধ

সীমান্ত ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন,

"একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের আকাশসীমায় অনুমতি ছাড়া ড্রোন প্রবেশ আন্তর্জাতিক আইন ও সীমানা নিরাপত্তা চুক্তির লঙ্ঘন। এটি জাতিসংঘের নীতিমালার বিরুদ্ধেও যায়।"

তারা মনে করেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত দ্রুত কূটনৈতিকভাবে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় বিষয়টি তুলে ধরা।

🛡️ কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন: বিশ্লেষকদের মত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবীর বলেন,

"এ ধরনের ড্রোন অভিযান কেবল নজরদারির সীমাবদ্ধতা নয়, বরং এটি রাজনৈতিক ও সামরিক বার্তা বহন করে। বাংলাদেশ সরকারকে এখন কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত সচেতনভাবে কাজ করতে হবে।"

তিনি আরও বলেন,

"বাংলাদেশের জনগণ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে এই ধরনের ঘটনা প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।"

🔍 ভারতীয় বিএসএফের আগের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড

ভারতীয় বিএসএফ এর আগেও বাংলাদেশের সীমান্তে গুলি চালানো, পুশ ইন, এবং বিনা উসকানিতে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর মতো ঘটনার জন্য সমালোচিত হয়েছে।

গত বছরের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা বলেন,

"বিএসএফের একাধিক আচরণকে আগ্রাসী বলা চলে। বিশেষ করে ড্রোন ব্যবহার এখন একটি সামরিক কৌশল, যা ব্যবহার করে তারা মানসিক চাপে ফেলতে চায়।"

📣 প্রতিবাদ ও দাবি

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ফিরোজ মিয়া বলেন,

"ভারতের এই আচরণকে তীব্র নিন্দা জানাই। সরকারকে বলবো রাষ্ট্রীয়ভাবে ভারতের কাছে জবাব চাইতে হবে— কেন তারা বাংলাদেশে ড্রোন উড়াচ্ছে? এটি বন্ধ না হলে, সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।"

🏛️ সরকার কী করবে?

এই ঘটনায় এখনো সরকারিভাবে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দ্রুত ভারতের দূতাবাসের মাধ্যমে কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানানো উচিত।


SHARE

Author: verified_user

0 $type={blogger}: