চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়ার প্রস্তাব দেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এই টার্মিনাল দেশের কনটেইনার বাণিজ্যের ৬০% নিয়ন্ত্রণ করে এবং বছরে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অপারেটরদের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানো হবে, কিন্তু বিরোধীরা এটিকে "জাতীয় সম্পদের বেসরকারিকরণ" বলে আখ্যায়িত করছেন।
আরও পড়ুনঃ
ঈদুল আজহাকে ঘিরে রেমিট্যান্স প্রবাহে ঊর্ধ্বগতি
বিতর্কের মূল বিষয়গুলো
ডিপি ওয়ার্ল্ডের অংশগ্রহণ:
সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই কোম্পানিকে পিপিপি মডেলে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শুরু হওয়া এই উদ্যোগ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও এগিয়ে নিচ্ছে।
প্রতিবাদের কারণ:
এনসিটি ইতিমধ্যেই লাভজনক এবং দেশীয়ভাবে সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া হলে ট্যারিফ বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই এবং রাজস্ব আয় হ্রাসের আশঙ্কা।
রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাব: বিএনপি, জামায়াত, বাম দলসহ ১২টি সংগঠন এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে।
সরকারের যুক্তি:
আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো।
২০৩০ সালের মধ্যে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা ৭৮ লাখ টিইইউএস-এ উন্নীত করার লক্ষ্য।
অন্যান্য টার্মিনালে বিদেশি অংশীদারিত্ব
বে-টার্মিনাল: সিঙ্গাপুরের পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল (১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ)।
লালদিয়া টার্মিনাল: ডেনমার্কের এপি মোলার-মায়েরস্ক (৬০-৮০ কোটি ডলার)।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর: চীনের সহায়তায় নির্মাণাধীন।
প্রতিবাদ ও আন্দোলন
শ্রমিক সংগঠনগুলোর অবস্থান:
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ১৯-২৬ মে পর্যন্ত মশাল মিছিল, সমাবেশ ও ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
চট্টগ্রাম সুরক্ষা কমিটি বন্দর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।
রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য:
তারেক রহমান (বিএনপি): "জাতীয় সংসদে আলোচনা ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়।"
শাহজাহান চৌধুরী (জামায়াত): "লাভজনক স্থাপনা বিদেশিদের হাতে দেওয়া অর্থনৈতিক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।"
বিশ্লেষণ
সুযোগ: বিদেশি বিনিয়োগে অবকাঠামো উন্নয়ন ও জাহাজ ভিড়ানোর সময় কমতে পারে।
ঝুঁকি: সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণ হারানো, স্থানীয় শ্রমিকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়া।
সিদ্ধান্তের ভবিষ্যৎ
সরকার জোর দিয়ে বলছে, শুধু নতুন টার্মিনালগুলোতেই বিদেশি অংশীদারিত্ব সীমিত রাখা হবে। কিন্তু এনসিটি ইস্যুতে জনমত ও রাজনৈতিক চাপের মুখে নীতিপরিবর্তনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মূল প্রশ্ন:
দক্ষতা বৃদ্ধির নামে কি জাতীয় সম্পদ বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া উচিত?
এই সিদ্ধান্ত কি চট্টগ্রামবাসী ও বন্দর শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করবে?
এই বিতর্কের সমাধান হতে পারে একটি স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক আলোচনার মাধ্যমে, যেখানে সব স্টেকহোল্ডারের মতামত বিবেচনা করা হয়।
0 $type={blogger}: