Native News

চাকরির খবর

চাকরি

Monday, May 5, 2025

মর্যাদার আসনে থেকেও সংসার চালাতে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের হিমশিম

SHARE

 


ইমাম-মুয়াজ্জিন সমাজের সবার কাছেই সম্মানিত। সমাজের ছোট-বড় সবাই তাদের শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু তাদের ভেতরের কষ্ট মুখের হাসিতেই চাপা পড়ে থাকে। যৎসামান্য বেতনে চাকরিতে ঢোকেন তারা। কিন্তু বছরের পর বছর সেই একই বেতনে চলতে হয় তাদের।

কোনো কোনো জায়গায় সময়মতো বেতনও দেওয়া হয় না, বোনাস তো তাদের কাছে স্বপ্ন। নেই ছুটির নীতিমালা। মসজিদ কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারির সন্তুষ্টি ছাড়া ছুটি মেলা ভার।

সারা দেশের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার বাইরে ইমামদের বেতন সাধারণত ৫ থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে। আর মুয়াজ্জিনের বেতন ৩ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে। তবে এর থেকেও কম বেতনে অনেককে চাকরি করতে দেখা যায়। অবশ্য ঢাকার ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন কিছুটা বেশি। তবে সেটিও পর্যাপ্ত নয়।

ঢাকার ইমামরা সাধারণত বেতন পান ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। আর মুয়াজ্জিনরা পান ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা। নিম্ন বেতনে ইমামতি বা মুয়াজ্জিনি শুরু করার পর ৮ থেকে ১০ বছরেও বাড়ে না এক টাকাও। অথচ অধিকাংশ মসজিদেই মাস শেষে ব্যাংকে টাকা জমা হয়। মসজিদের মার্কেট, দোকান ও জমিসহ বিভিন্ন আয়ের উৎস থেকে টাকা জমা হয়ে পড়ে থাকে, তা সত্ত্বেও মসজিদ স্টাফদের বেতন বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না।

অনেক মসজিদের মুয়াজ্জিন-খাদেমকে কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারি ব্যক্তিগত সহকারীর মতো যাচ্ছেতাই কাজে ব্যবহার করেন। প্রায় সব মসজিদেই মুয়াজ্জিনকে মসজিদে থাকতে হয়। কোনো কোনো জায়গায় সিঁড়ির নিচে ছোট কুঠুরিতে মানবেতরভাবে থাকতে হয় তাদের। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের থাকার জন্য একটি ভালো রুমের ব্যবস্থা করে না মসজিদ কমিটি।

রোজার সময় ওঠানো টাকা থেকে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের কিছুটা দেওয়া হয়। এটাই তাদের বোনাস। কোরবানির ঈদে তারা বেতনের বাইরে কোনো টাকাই পান না। অবশ্য যারা ইমামতির সঙ্গে খতিবের দায়িত্ব পালন করেন, কিংবা শুধু খতিবের দায়িত্ব পালন করেন, তাদের বেতন কাঠামো তুলনামূলক ভালো।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের ইমামদের জন্য নেই কোনো ছুটির নীতিমালা। ছুটির জন্য তাদের নির্ভর করতে হয় মসজিদের সভাপতি-সেক্রেটারির সন্তুষ্টির ওপর। তাদের সন্তুষ্টি ছাড়া ছুটি মেলা ভার। ঢাকার ইমাম-মুয়াজ্জিনরা ছুটিছাটা পেলেও ঢাকার বাইরের অনেক জায়গায় ইমাম-মুয়াজ্জিনরা মাসের পর মাসে একদিনের জন্যও ছুটি কাটাতে পারেন না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের একটি মসজিদের ইমাম জালাল উদ্দিন রুমি বলেন, ‘আমি গত ১০ বছর ধরে ইমামতি করি। ৫ হাজার টাকায় এক মসজিদে আমি ৬ বছর চাকরি করেছি। ছয় বছরে বেতন এক টাকাও বাড়েনি। তাছাড়া মসজিদে জুমার নামাজের সময় রাজনীতি নিয়ে কোনো আলোচনা করা যায় না। এমনকি সুদ-ঘুসের বিরুদ্ধেও জোরালো আলোচনা করা যায় না।’

দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট থানার খাইরুল নামের একজন মুয়াজ্জিন বলেন, ‘আমি ১০ বছর আগে এক হাজার ৫০০ টাকায় চাকরি শুরু করি। বর্তমানে ৩ হাজার টাকা পাই। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই কাজ করি। তিন হাজার টাকা দিয়ে কি বর্তমানে কিছু হয়?’

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের একজন ইমাম নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মানুষ আমাদের অনেক সম্মান করে। তারা মনে করে আমরা কত ভালো আছি। কিন্তু আমরা আসলে অনেক কষ্টে থাকি। আমাদের আসলে সমস্যার কোনো শেষ নেই। একজন ইমামের জন্য কোনো রেজুলেশন নেই, কোনো নিয়ম-কানুন নেই। মসজিদ কমিটি যা বলবে, তা-ই করতে হবে। বেতন বা সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য আবেদন করলে ইমামকে তার চাকরি থেকে অব্যাহতির বিষয়ে আলোচনা ওঠে।

গাজীপুর বাইতুশ শফিক মসজিদের খতিব ও বাইতুল হিকমাহ একাডেমির পরিচালক হাফেজ মাওলানা যুবায়ের আহমাদ বলেন, একজন ইমামের দায়িত্ব শুধু নামাজ পরানো নয়। তার দায়িত্ব হচ্ছে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। আর এ কাজ করতে গিয়ে তাকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। সুদ-ঘুসের বিরুদ্ধে কথা বলে অনেকের রোষানলে পড়তে হয়। এমনকি শেষ পর্যন্ত চাকরিও হারাতে হয়।

যুবায়ের আহমাদ আরো বলেন, একজন ইমাম হয়তো সমাজ পরিবর্তন করতে পাঁচ বছরের একটা পরিকল্পনা হাতে নেন। কিন্তু তাকে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই জব স্টেশন ছাড়তে বাধ্য করা হয়। সুতরাং ইমামদের চাকরির সিকিউরিটি গুরুত্বপূর্ণ। ইমামদের নিয়োগ যেমন একটা নীতিমালার আলোকে হওয়া দরকার, ঠিক তেমনই চাকরিচ্যুতির ক্ষেত্রে আলেম ও প্রশাসনের লোকদের তদন্তের মাধ্যমে হওয়া দরকার।

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মানোন্নয়ন ও তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন নিয়ে কাজ করে শানে সাহাবা জাতীয় খতিব ফাউন্ডেশন। এ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীম মজুমদার বলেন, ‘আমরা চাই দেশের প্রতিটি মসজিদের ইমাম যেন আর্থ-সামাজিভাবে স্বাবলম্বী হন। সে সঙ্গে মসজিদের মিম্বার থেকে যেন তারা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেন।’

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মুফতি মো. মুহিববুল্লাহিল বাকী বলেন, ‘এ দেশের ইমামরা যদি আর্থ-সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী হন, তাহলে তারা উচ্চস্বরে ইসলামের কথা বলতে পারবেন। সমাজে নেতৃত্ব দিতে পারবেন। ইসলামবিদ্বেষীরা এটা করতে দিতে চায় না। আর এ ষড়যন্ত্রের কারণে ইমামদের চাকরি স্থায়ী করা হয় না এবং তাদের বেতন বাড়ানো হয় না। সামান্য অজুহাতে তাদের অব্যাহতি দেওয়া ও আর্থিকভাবে দুর্বল রেখে তাদের মাধ্যমে সমাজ সংস্কার চাওয়া একেবারেই সাংঘর্ষিক।’

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মানোন্নয়ন করে যাচ্ছি। তাদের সহযোগিতা করার জন্য ঋণও দিয়ে থাকি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদগুলোতে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা সব সময় তাদের কল্যাণকামী।’

জানতে চাইলে ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, অর্ধ-স্বায়ত্তশাসিত, ওয়াক্ফ নিয়ন্ত্রিত মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের জন্য বেতন কাঠামো করার চিন্তা করা হচ্ছে। আমরা মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা করার কাজে হাত দিয়েছি। ২০২৫ সালের নিরিখে তাদের জন্য একটা পে-স্কেল (বেতন কাঠামো) করা যায় কি না, এটাও আমাদের বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখছেন।

Source: AmarDesh

SHARE

Author: verified_user

0 $type={blogger}: