Native News

চাকরির খবর

চাকরি

Friday, March 14, 2025

গুতেরেসের সফরকালে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা পরাজিত শক্তির

গুতেরেসের সফরকালে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা পরাজিত শক্তির

 


আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারকে নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বর্তমানে পুলিশ প্রয়োজন ছাড়া কোনো স্থানে তেমন শক্ত বলপ্রয়োগ করছে না। প্রতিদিন সড়কে বিভিন্ন গ্রুপ দাবি আদায়ের জন্য নির্দ্বিধায় নেমে পড়ছে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থাকছেন পথচারীরা। পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করছে। তবে গত মঙ্গলবার শাহবাগের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা সরকার ও পুলিশকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। সরকারি একাধিক সংস্থার ধারণা, জাতিসংঘ মহাসচিবের আগমনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করতে চাচ্ছে একটি চক্র।

সূত্রমতে, এই চক্রটি শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা রকম গুজব ছড়িয়ে ষড়যন্ত্র করছে। সরকারের নানা ইস্যু নিয়ে তারা ফেসবুকে সক্রিয় ছিল।

মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, শাহবাগে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা পুলিশকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআই) অন্তর্ভুক্ত এলাকা। ওই বাসভবনের সামনে যেতে পুলিশের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে বলেছিল, প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে তারা চলে যাবেন। কিন্তু হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে এসে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। কিংকর্তব্যবিমুঢ় পুলিশ ওই সময় পরিস্থিতি সামলে নেয়।


এই ঘটনায় পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম আহত হন। শিশু আছিয়ার ধর্ষণের বিষয়টিকে পুঁজি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার উদ্দেশ্য রয়েছে পুলিশের ওপর হামলাকারীদের। তাদের কেউ কেউ গণজাগরণ মঞ্চ বা ফ্যাসিবাদের মঞ্চের মতো আরেকটি মঞ্চ গড়ার হুমকি দিয়েছেন। কিছুদিন আগে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মেঘমল্লার বসু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছিলেন, আবারও ‘লাল সন্ত্রাস’ চালাতে হবে। ওই ঘটনায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে পুলিশকে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। তবে তিনি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।


জানা গেছে, শাহবাগে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বাম সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও অনুপ্রবেশকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা থাকতে পারে বলে ধারণা পুলিশের। বিষয়টি তারা তদন্ত করছে। এই গোষ্ঠী যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো ধরনের অবনতি ঘটাতে না পারে, সেদিকে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।


পুলিশ বলছে, যারা রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা কারণে ৫ আগস্টের পর পুলিশের মনোবল ভেঙে গেছে। এ অবস্থায় যদি অব্যাহতভাবে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে, তাহলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বাড়বে।


এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।’


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি পুলিশের ওপর অব্যাহত হামলা হচ্ছে। এতে সমাজে বিভিন্ন মানুষের এক ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে পুলিশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ, এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে পুলিশের মধ্যে কাজের স্পৃহা কমে যাবে।


পুলিশের মাঠপর্যায়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহবাগে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাকে তারা সংবেদনশীল হিসেবে নিয়েছেন। যারা হামলা করেছেন, তারা জুলাই বিপ্লবে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না। বরং এদের মধ্যে কেউ কেউ গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। শাহবাগে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চের নেত্রী লাকি জড়িত। লাকি ও তার সঙ্গীরা দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিলেন। হঠাৎ আছিয়া ইস্যুতে তারা জড়ো হন।


পুলিশ জানায়, ওই হামলায় জেলে থাকা জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু ও সাবেক মন্ত্রী পলকের উসকানি রয়েছে। তারা মামলার হাজিরার সময় ক্যামেরার সামনে এসে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করছেন। পলককে ক্যামেরার সামনে বলতে শোনা গেছে, ‘আরেকটি লড়াই করতে হবে, জেগে ওঠো বাংলাদেশ।’ আর ইনু (হাসানুল হক) ক্যামেরা দেখলেই বলেন, ‘জেগে ওঠো বাংলাদেশ। যুদ্ধ করো।’ তাদের এমন মন্তব্যে ওই হামলার পেছনে উসকানি থাকতে পারে।

সূত্র জানায়, শাহবাগে পুলিশের ওপর হামলার পর খুব পরিকল্পিতভাবে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, বাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যরাই পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের একাধিক জেলায় তাদের ধরার জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে হামলাকারীরা গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া ওই হামলার সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী জড়িত কি না, তা চিহ্নিত করতে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Source - Amardesh


Thursday, March 13, 2025

ধর্ষণের শিকার ৪৩ হাজার নারী-শিশু

ধর্ষণের শিকার ৪৩ হাজার নারী-শিশু


 

স্বৈরাচারী সরকারের আমলে ছাত্রাবাস থেকে শুরু করে রাজপথ—সর্বত্র ধর্ষণের মচ্ছব চলেছে। গত ছয় বছরে প্রায় ৪৩ হাজারের বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ৭ হাজার শিশুও রয়েছে। এ সময়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং ২৮ হাজার ৪৮ নারী ও শিশু অপহরণের শিকার হয়েছেন।

ফ্যাসিস্ট শাসনামলে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য নারীদের ধর্ষণ করেছে। তবে নারীবাদী নেত্রী ও মহিলা পরিষদের মতো সংগঠনগুলো এ ধরনের ঘৃণ্য ঘটনায় প্রতিবাদ না করে বরং বছরের পর বছর এসব ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছে। এমনকি তাদের নীরবতা হাইকোর্ট ডিভিশন পর্যন্ত নজরে এসেছে।


জুলাই গণবিপ্লবের সময় আন্দোলনরত নারী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি বাহিনী ও ছাত্রলীগের কর্মীরা নারীদের আন্দোলনে অংশগ্রহণে বাধা দিতে যৌন নিপীড়ন ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে। কয়েকটি ঘটনায় নারী আন্দোলনকারীদের বেআইনিভাবে আটক করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। জাতিসংঘ এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।


পুলিশের তথ্যে ধর্ষণের সংখ্যা

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে দেশে ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সারাদেশে ধর্ষণের ঘটনায় ৩৪ হাজার ৪৭০টি মামলা করা হয়েছে। এ সময়ে পুলিশ ৬ হাজার ১০০টি মামলার তদন্ত শেষে ৯ হাজার ২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে। আরও অনেক মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


২০১৯ সালে সারাদেশে ধর্ষণের ঘটনায় ৬ হাজার ১১৪টি মামলা করা হয়েছে। ২০২০ সালে ৭ হাজার ১৯৪টি, ২০২১ সালে ৬ হাজার ৯৮৬টি, ২০২২ সালে ৭ হাজার ১২টি এবং ২০২৩ সালে ৬ হাজার ২৩২টি মামলা হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ৩০৮টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩৫১টি ও মার্চ মাসে ৩৭৩টি মামলা করা হয়েছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (গত ৬ বছরে) ৪৩ হাজার ৪৭২টি ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ সময়ে নারী নির্যাতনের ঘটনায় ১৭ হাজার ৫৭১টি মামলা হয়েছে। যৌতুক না পেয়ে ও ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৫৯ জন নারী। শুধু ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে ৪ হাজার ৩৩১টি, নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১২ হাজার ৭৬৯টি। এ সময়ে যৌতুক না পেয়ে ও ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৫৯ জন নারী। আগস্ট মাসে ‘পুলিশ শূন্য সময়’ থাকায় সবচেয়ে কম মামলা হয়েছে।


পুলিশ ও মহিলা পরিষদের তথ্যে পার্থক্য

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ২১ হাজার ৭৬৪টি মামলা হয়েছে, ২০২০ সালে ২২ হাজার ৫১৭টি, ২০২১ সালে ২২ হাজার ১৩৬টি, ২০২২ সালে ২১ হাজার ৭৬৬টি এবং ২০২৩ সালে ১৮ হাজার ৯৪১টি মামলা হয়েছে। ২০২৪ সালে জুলাই বিপ্লবের কারণে পুলিশের অনুপস্থিতিতে কিছু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়নি।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ১ হাজার ৭ জন নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ২০১৯ সালে ১ হাজার ৭৮৪ জন, ২০২১ সালে ৩ হাজার ৭০৩ জন এবং ২০২২ সালে ৯৮৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২০২৩ সালে ২ হাজার ৯৩৭টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৬৩৯ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।


ছাত্রলীগের হাতে ধর্ষণ

২০২৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বহিরাগত এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত যুবক মামুন। মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।


২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে তার সম্মুখেই স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের সক্রিয় ছয় কর্মী জড়িত ছিল। হাইকোর্ট এ ঘটনায় নারী নেত্রীদের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

পুলিশের বক্তব্য


পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি মিডিয়া ইনামুল হক সাগর বলেন, ধর্ষণের মতো অপরাধ কেন বাড়ছে তা নিয়ে তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশ চার্জশিট দেওয়ার পর অপরাধীরা যথাসময়ে শাস্তি পেলে অপরাধ কমবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। নৈতিক মূল্যবোধের অভাব ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে সামাজিক বন্ধন দুর্বল হলে মানুষ এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।


বর্তমান সরকারের অবস্থান

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার বিচার সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে।

পুলিশ হেডকোয়ার্টারে হটলাইন চালু

নারী নির্যাতন, ইভটিজিং, যৌন হয়রানি বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স হটলাইন চালু করেছে। হটলাইন নম্বরগুলো হলো - ০১৩২০০০২০০১, ০১৩২০০০২০০২, ০১৩২০০০২২২২।