আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারকে নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বর্তমানে পুলিশ প্রয়োজন ছাড়া কোনো স্থানে তেমন শক্ত বলপ্রয়োগ করছে না। প্রতিদিন সড়কে বিভিন্ন গ্রুপ দাবি আদায়ের জন্য নির্দ্বিধায় নেমে পড়ছে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থাকছেন পথচারীরা। পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করছে। তবে গত মঙ্গলবার শাহবাগের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা সরকার ও পুলিশকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। সরকারি একাধিক সংস্থার ধারণা, জাতিসংঘ মহাসচিবের আগমনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করতে চাচ্ছে একটি চক্র।
সূত্রমতে, এই চক্রটি শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা রকম গুজব ছড়িয়ে ষড়যন্ত্র করছে। সরকারের নানা ইস্যু নিয়ে তারা ফেসবুকে সক্রিয় ছিল।
মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, শাহবাগে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা পুলিশকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআই) অন্তর্ভুক্ত এলাকা। ওই বাসভবনের সামনে যেতে পুলিশের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে বলেছিল, প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে তারা চলে যাবেন। কিন্তু হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে এসে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। কিংকর্তব্যবিমুঢ় পুলিশ ওই সময় পরিস্থিতি সামলে নেয়।
এই ঘটনায় পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম আহত হন। শিশু আছিয়ার ধর্ষণের বিষয়টিকে পুঁজি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার উদ্দেশ্য রয়েছে পুলিশের ওপর হামলাকারীদের। তাদের কেউ কেউ গণজাগরণ মঞ্চ বা ফ্যাসিবাদের মঞ্চের মতো আরেকটি মঞ্চ গড়ার হুমকি দিয়েছেন। কিছুদিন আগে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মেঘমল্লার বসু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছিলেন, আবারও ‘লাল সন্ত্রাস’ চালাতে হবে। ওই ঘটনায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে পুলিশকে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। তবে তিনি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
জানা গেছে, শাহবাগে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বাম সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও অনুপ্রবেশকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা থাকতে পারে বলে ধারণা পুলিশের। বিষয়টি তারা তদন্ত করছে। এই গোষ্ঠী যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো ধরনের অবনতি ঘটাতে না পারে, সেদিকে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
পুলিশ বলছে, যারা রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা কারণে ৫ আগস্টের পর পুলিশের মনোবল ভেঙে গেছে। এ অবস্থায় যদি অব্যাহতভাবে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে, তাহলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বাড়বে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি পুলিশের ওপর অব্যাহত হামলা হচ্ছে। এতে সমাজে বিভিন্ন মানুষের এক ধরনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে পুলিশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ, এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে পুলিশের মধ্যে কাজের স্পৃহা কমে যাবে।
পুলিশের মাঠপর্যায়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহবাগে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাকে তারা সংবেদনশীল হিসেবে নিয়েছেন। যারা হামলা করেছেন, তারা জুলাই বিপ্লবে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না। বরং এদের মধ্যে কেউ কেউ গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। শাহবাগে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চের নেত্রী লাকি জড়িত। লাকি ও তার সঙ্গীরা দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিলেন। হঠাৎ আছিয়া ইস্যুতে তারা জড়ো হন।
পুলিশ জানায়, ওই হামলায় জেলে থাকা জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু ও সাবেক মন্ত্রী পলকের উসকানি রয়েছে। তারা মামলার হাজিরার সময় ক্যামেরার সামনে এসে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করছেন। পলককে ক্যামেরার সামনে বলতে শোনা গেছে, ‘আরেকটি লড়াই করতে হবে, জেগে ওঠো বাংলাদেশ।’ আর ইনু (হাসানুল হক) ক্যামেরা দেখলেই বলেন, ‘জেগে ওঠো বাংলাদেশ। যুদ্ধ করো।’ তাদের এমন মন্তব্যে ওই হামলার পেছনে উসকানি থাকতে পারে।
সূত্র জানায়, শাহবাগে পুলিশের ওপর হামলার পর খুব পরিকল্পিতভাবে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, বাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যরাই পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, ফুটেজ দেখে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের একাধিক জেলায় তাদের ধরার জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে হামলাকারীরা গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া ওই হামলার সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী জড়িত কি না, তা চিহ্নিত করতে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।
Source - Amardesh